নুসরাত নুসিনের ৩টি কবিতা



আঙুলস্বরূপ

আর যাওয়ার তাড়না নেই--
এমনকি আসারও

শতমাইল খাঁড়িপথ পার হয়ে এসেছি এখানে।
সোয়াসী নদীর দীর্ঘ আহবানে
বিরুদ্ধ তরঙ্গ বেয়ে
সহযাত্রী জলেরাও এসেছে।
অথচ দুই কূল দুই পথে
ক্রমশ বহুদূর...

আমি কতদিন জলের গভীরে
একটা হাত ধরতে ধরতে পেয়ে গেছি কিছু সুদৃশ্য আঙুল
অথবা আঙুলস্বরূপ।

ওরা নিজেদের একক অস্তিত্ব লুপ্ত করতে করতে ফিরে যাচ্ছে।


ঋতুহীন হাওয়ায়

কখনো কখনো এই ঘনবদ্ধ মৌনতার চেয়ে রাতের নীরবতা বেশি ভালো।
নির্জন স্বরের কানে চুপিচুপি কথা বলা যেতে পারে। সৌখিন বাঁক ঘুরে
কথারা নিজ কানে কানে ফিরে আসে।

ও প্রান্তে ধ্যানমগ্ন শিশিরপতন-- 
নিয়মমতোই জোৎস্না ঝরায় জল

আমি ভুলে যাই, এই তন্দ্রাহীন মাটির ফোঁড় ফোঁড় বুকের উপরে
সুরের শরীরে অজস্র কম্পন লুকিয়ে পড়ে। অজস্র চাহনি জ্বালিয়ে
তারা সুদীর্ঘ রাত এইখানে জেগে আছে। আর এখন সমস্ত সংবেদনা শেষে চাঞ্চল্য রেখেছে
পৌষের হিম আদিগন্তে, মুঠো মুঠো নাড়ার শরীরে।

রাত্রির কিনারে শেষ ছবি যখন মুছে যাচ্ছে মৌনতাক্রান্ত 
ভোর খুলে,
তখন ঋতুহীন হাওয়ায় দুলছে
                                অনন্তবাসনা।


বাঁশি ও অহম

তবু আমি সুরের মায়ায় একটি বাঁশিকে গন্তব্য করলাম।
সুর ও শরীর নিয়ে আমাদের আত্মাগুলো অভিন্ন।
ভাবলাম, আমরা নিঃশ্বাস ও প্রশ্বাসের মতো মিলিত হবো।

বাঁশির মগ্নতা নিজের নয়। তাতে উপরি ফুঁয়ের জোর লাগে।
ফুঁয়ের প্রাবল্যে বাঁশিটি সুরের গোপন পাবে।

অথচ আমাদের বিচ্ছেদ ঘটালো অহম। বাঁশির একাধিক চোখ আজ শরীর মন সচেতন



                                                (চিত্রঋণ : Iranian movieHeiran” by director Shalizeh Arefpur)

3 comments:

  1. ভীষণ ভাল লাগল! :)

    ReplyDelete
  2. ভালো লেগেছে। তবে যেহেতু শুকনো ব্যাকরণকার, তাই বলি যে, 'মৌনতা' কথাটা ঠিক নয়। 'মৌন'ই হল বিশেষ্য। বিশেষণ 'মৌনী'। অলোকরঞ্জনের একটা লাইন আছে, 'হে আকাশ, কেন অগাধ মৌনে আমাকে ডাকো ?' -তাতে ঠিক প্রয়োগ আছে।

    ReplyDelete
  3. বাঁশির একাধিক চোখ

    ReplyDelete