ব্রেকফাস্ট টেব্‌ল ও অন্য দুটি কবিতা : অনিন্দিতা গুপ্ত রায়



ব্রেকফাস্ট টেব্‌ল

মন শুধু মনই তো, ফোঁটা ফোঁটা আলতো ঠোঁটের ভেতর গলে পড়ছে আর কুসুমের ভেতর আরোহণ অবরোহণ মৃদু মৃদু ছড়িয়ে পড়তে দেখছি। বাদামী মাশরুম ও কফিগুঁড়ো মেখে সকালের আশেপাশে উৎসব লিখছি, তিথিহীনবেতের চেয়ার টপকে দুএকটা রূপোলীর নুন ও মরিচচামড়া ফুটো করে অনেকদূর দেখতে পাচ্ছি, যতদূর একাগ্র পায়চারি করে করে কাঁধের ওপর মাথা রেখে মনে মনে কেঁদে নেওয়া যায়এইসব দৃশ্যগুলি বারবার নির্মিত হবে আর উদাসীনতার ভেতর উলের রঙিন বলে গড়িয়ে দিয়ে শীতঋতু, ঋতুদাগ রয়ে যাবে অন্য কোনও বসন্তবিলাসে। 

সিম্ফনি

ব্যর্থ শব্দের থেকে অনিচ্ছুক য-ফলা’টি একটানে খুলে ফেলিসেসময় যে সকল পাখি পিয়ানোর ইঙ্গিতে সন্ধ্যা খুঁজেছে ---তারা অন্ধকার ও আলোর যোগবিয়োগ করতে করতে নেমে আসছে তোমার মুখের ভাঁজেকোলাহল গুছিয়ে বসছে অবনত। আসলে তো দুচোখের পাখনারা এতখানি উড়ান-উদ্যত। পাথর কুড়োনো, ছুঁড়ে ফেলা, ডুবে যেতে চেয়ে ভেসে ওঠা পিয়ানোর চলাচল দেখছি। পাঁজরের ধাপে ধাপে সাদা রঙ কালো রঙ কোমলে কড়িতে মরে যাচ্ছে।  
ক্রমাগত বেজে যাচ্ছে বেজে যাচ্ছে 

পরীকথা
 
মস্ত খাঁচার ভেতর অল্প অল্প করে পাশ ফেরা, হাই তোলা, ঘুম ভেঙে উঠে বসা দেখি চতুস্পদটিরস্থির চোখ, নিচু মাথা, নতজানু প্রতিরোধ খুলে ফেলে দিইসমস্ত শরীর থেকে টুকরোটাকরা ঘাস জুড়ে জুড়ে ওই দূরে স্মৃতিসৌধ ছুঁয়ে ফ্যালেঅমনি পরীর ডানা আলো হয়ে পাক খেয়ে ওঠেঅদৃশ্যপ্রায় সুতোদের বিন্যাসে অন্ধতাতার ধারালো থেকে কন্ঠনালীর দিকে ধেয়ে আসে জড়ানো কাচগুঁড়ো ঘুড়ির উড়ান গল্পের ডানা বিস্তৃত করছে বুঝে--সমস্ত দৃশ্যাবলী ভাঁজ করে ছুঁড়ে ফেলে দিতে থাকোসুতো খুলতে খুলতে এতখানি বিস্তার জাগে যেন এইখানে মৃত্যুভয় নেই। শোকের শরীরে শুধু জল, ঢেউশূন্য।


কুয়াশার আখ্যানের মধ্যে

                                                          (চিত্রঋণ : Laura Tovar Dietrick )

8 comments:

  1. খুব ভালো লাগল অনিন্দিতা

    ReplyDelete
  2. 'কোলাহল গুছিয়ে বসছে অবনত'----তোমার কলমে এক অদ্ভুত স্নিগ্ধতা আছে...সত্যি যেন কুয়াশার আখ্যান...ছুঁয়ে যাওয়া একেই বলে, না?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ছুঁয়ে যাওয়া? কি জানি---ভালোবাসা অনেক

      Delete